প্রকাশিত: ২৪/০৮/২০১৭ ৯:৫৫ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ২:৩৯ পিএম

নাইপেদো: মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের একটি গ্রামে বৌদ্ধরা সেখানকার সাতশ’ মুসলিমের ওই গ্রামে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। সপ্তাহে মাত্র দু’বার সেখানে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছে মুসলমানদের। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সংকটে রয়েছেন তারা।

স্থানীয় পর্যবেক্ষক এবং ত্রাণকর্মীরা বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেষা উত্তরাঞ্চলের রাখাইন রাজ্যে আবারো সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে সেখানকার অধিবাসী, ত্রাণকর্মী ও পর্যবেক্ষকরা জানিয়েছেন, ‘জে ডি পিন গ্রামের মুসলমানরা গত তিন সপ্তাহ ধরে খাবার, পানি ও কাজ করার জন্য এলাকার বাইরে যেতে পারছেন না।

পুলিশ জানিয়েছে, রাখাইনের বৌদ্ধ গ্রামবাসীরা রোহিঙ্গাদের কাছে খাবার বিক্রি না করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তবে ওই অঞ্চলে ইচ্ছেমত ঘোরাঘুরি এবং কাজে যেতে বাধা দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

পুলিশ সদরদপ্তরের মুখপাত্র কর্নেল মাইও থু সই জানিয়েছেন, ‘আমার ধারণা তাদের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে আর সেই কারণে তারা নিজেরাই বাইরে যেতে চাইছে না।’

রোহিঙ্গা মনিটরিং গ্রুপের ক্রিস লিউয়া জানালেন, ‘জে ডি পিন গ্রামের বর্তমান অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে যে কোনো মুহূর্তে এখানে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হতে পারে।’

জে ডি পিন গ্রামে পাঁচ হাজার অধিবাসীর বাস। রয়েছে একটি মসজিদ ও বৌদ্ধদের মনাস্ট্রি। গত মাস থেকে বেড়া দিয়ে ৭০০ রোহিঙ্গাদের ওই গ্রামে প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করেছে বৌদ্ধরা। ফলে ভেতরে থাকা বাজার, মসজিদ, মিঠা পানির পুকুরে যেতে পারছে না মুসলিম অধিবাসীরা। জুলাইতে পাশের একটি গ্রাম থেকে এক বৌদ্ধ নিখোঁজ হওয়ার পর একই সময় তিনজন রোহিঙ্গার লাশ পাওয়া যায়। ওই নিখোঁজ বৌদ্ধ ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগে মুসলিমদের ওই গ্রামে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বৌদ্ধরা-রয়টার্সকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোহিঙ্গা জানিয়েছেন এই কথা।

পুলিশকে এ প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করা হলে তারা বলেন, গত সপ্তাহে তারা ব্যাপারটি জেনেছেন, সপ্তাহে দু’দিন ১৫ জন রোহিঙ্গাকে পানি ও অন্যান্য বাজার সংগ্রহের জন্য ওই গ্রামে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়। শুক্রবার দু’পক্ষ একসাথে বসে এ ব্যাপারে একমত হয়েছে বলে জানান তিনি।

আগস্টের ১০ তারিখে একটি নিরাপত্তা বৈঠকে নেত্রী অং সান সুচি রাখাইনে নিরাপত্তা বাড়ানোর নির্দেশ দেয়ার পর ঐ অঞ্চলে আরও ৫০০ সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। এরপর পাশের পাহাড়ি এলাকায় রোহিঙ্গা জঙ্গিদের সন্ধানে অভিযান শুরু করেছে তারা। স্থানীয় বাসিন্দাদের পাহাড়ি এলাকায় প্রবেশে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের এক মুখপাত্র।

সরকার বলছে, তারা ঐ এলাকায় নিরাপত্তা উন্নয়নে কাজ করছে। ২০১২ সাল থেকেই মিয়ানমারে সাম্প্রদায়িকতা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সেসময় রাখাইনে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ২০০ মানুষ নিহত হয়, ১ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়।

রাখাইনে ১১ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিমের বাস, যাদেরকে সেদেশের সরকার নাগরিকতা দিতে নারাজ। এমনকি দেশের সব জায়গায় চলাচলের অনুমতি নেই তাদের। দেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায় তাদের অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী বলে উল্লেখ করে। গত বছরের অক্টোবরে রাখাইনে ৯ পুলিশ নিহত হওয়ার পর পুলিশের অভিযান শুরু হয়। ঐ অভিযানে রোহিঙ্গাদের উপর হত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে মিয়ানমারের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে। তখন থেকে এ পর্যন্ত ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

সূত্র: রয়টার্স, ডয়চে ভেলে

পাঠকের মতামত

রোহিঙ্গাদের ৩০ মিলিয়ন ডলারের বেশি সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য জনসংখ্যা, শরণার্থী ও অভিবাসন বিভাগ এবং ইউএসএআইডিয়ের মাধ্যমে কক্সবাজার, ভাসানচর এ অঞ্চলের ...